মাঝে মাঝে সম্পর্কটাতে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসতে হয়

​মাঝে মাঝে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটাতে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসতে হয়। ছোট ছোট কিছু কাজ আপনাদের মাঝে ভালোবাসাকে বাড়িয়ে দিবে, নতুন আবেগের জোয়ার নিয়ে আসবে। ধরুন আপনার হয়ত অনেকদিন আপনার জীবনসঙ্গীকে চিঠি লেখা হয় না। ছোট্ট কয়েকটি লাইনের একটা চিরকুট লিখে রাখুন --হতে পারে তার প্রতি আপনার আবেগের কথা, অথবা কোন ভুল করে ফেললে সেইটার স্বীকারোক্তি আর ক্ষমাপ্রার্থনার কথা। অনেকসময় এমনিতেই লিখতে পারেন। দু'টি লাইন লিখে রাখুন, এরপর একটু বুদ্ধি করে তার হাতে পৌঁছে দিন। এমনভাবে দেবেন, যেন এটি আপনাদের দু'জনের মাঝেই থাকে--আর কেউ দেখতে বা বুঝতে না পারে। চিরকুট লেখার বা দেয়ার মতন উপায় না থাকলে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে দিন। আপনার নাম্বার থেকে কয়েকটা শব্দ লিখে পাঠিয়ে দিন, যেই শব্দগুলো হয়ত আপনার আবেগ বয়ে নিয়ে যাবে আপনার প্রিয়জনের কাছে, আপনার জীবনসঙ্গীর কাছে -- যা পড়ে তিনি বুঝবেন আপনি এখনো তার কাছে এমন একজন যা তার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ছোট্ট অনুভূতিটা আপনি তাকে দিলে দেখবেন বিনিময়ে আপনি আরো বেশি ভালোবাসা ফিরে পাবেন। আর হ্যাঁ, আমাদের হৃদয়গুলোতে ভালোবাসা তৈরি করে দেয়ার মালিক আল্লাহ। তিনি গাফুরুল ওয়াদুদ, প্রেমময় ও ক্ষমাশীল। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আপনাদের মাঝে ভালোবাসা বাড়িয়ে দেন, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আপনাদের পবিত্র সম্পর্কটিকে রক্ষা করেন।

দু'জনার আবেগের দুরত্ব যখন বিপদের কারণ

​​অনেক সংসারের অস্বাস্থ্যকর দাম্পত্য জীবন এবং সেইসূত্রে ভাঙ্গন পর্যন্ত হয় যার সূচনায় থাকে মূলত স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কথোপকথন না হওয়া, দু'জনার মাঝে বন্ধুত্ব না থাকা। দু'জন কথাবার্তার তেমন কোন উপলক্ষ খুঁজে পান না কিংবা যখন আলাপ করে আনন্দ অনুভব করেন না তখনই এমন সমস্যার সূত্রপাত হয়।

সমস্যাটি একদিনে তৈরি হয় না। ক্রমাগত হতে হতে বড় আকার ধারণ করে। এই সমস্যা নিরসনে আপনার উচিত প্রতিদিন কিছু কাজ করা। প্রতিদিন একটু একটু করে সঙ্গীকে বিশেষ সময় দেয়া, তার সাথে আবেগ ভাগাভাগি করে নেয়া। একটু দুরত্ব সৃষ্টি হতে দিলে সেটা অনেক বড় দুরত্ব তৈরি করে দেয় কিছুকাল পরেই।

দু'জনার সম্পর্কে আপনার প্রতিদিনের কিছু 'investment' আপনাকে বিশাল 'profit' এনে দিবে। তাই, অন্তত কিছু কাজ করুন যা হবে আপনাদের মাঝে একটি বন্ধুত্ব সৃষ্টিকারী, আনন্দময় কথোপকথনের একটি কারণ। প্রেমময় ও ক্ষমাশীল আল্লাহ আমাদের সংসারগুলোতে বারাকাহ দিন, সেগুলোকে শান্তিময়তায় ভরিয়ে দিন...

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ক্লান্তি ও বিরক্তি যখন আসে

​​​​বিয়ের পর থেকেই আপনার অস্তিত্বের সাথে আরেকটা মানুষ জুড়ে রয় প্রায় প্রতিটি মূহুর্তেই। উপস্থিতিতেই থাকুন বা অলক্ষ্যেই থাকুন অপরজন আপনার সত্ত্বার সাথে মিশেই থাকেন। স্বামী-স্ত্রী হওয়া এই দু'জন মানব-মানবী পরস্পরের পরিপূরক। একজন মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যতই অসাধারণ হন না কেন, সৃষ্টিগতভাবে তার যেই সীমাবদ্ধতাগুলো, সেগুলোকে ঢেকে রাখেন সেই প্রিয়জনটি, তিনি আপনার শারীরিক-মানসিক-আত্মিক অভাবগুলোকে মেটাতে সাহায্যকারী হবার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু তবুও, মাঝে মাঝে সম্পর্কটির অনেক কিছুর কথা ভেবেই নিজেকে যেন অনেক ক্লান্ত মনে হয়। মনে হতে পারে-- এত সব কষ্ট, এত আবেগ আর পরিশ্রম আমার কি বিফলে যাচ্ছে? এরকম ক্লান্ত-শ্রান্ত হওয়া অনুভূতিগুলোকে ভুল বুঝবেন না, এটা মানবিক। তবে এরকম ক্লান্তির সাথে ভর করে শয়তান কাজ করবে আপনার উপরে। দাম্পত্য জীবনটাকে নিপুণ জীবন ধরে নিবেন না দয়া করে। এই জীবনটা গড়ে নেয়ার, দু'জনে মিলে গড়ে তোলার।

জীবনসঙ্গীর জন্য আপনি ক্রমাগত অনেক পরিশ্রম করেন...আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বামী/স্ত্রীর জন্য যে কষ্টটুকু,খরচটুকু আপনি করেন তার উত্তম প্রতিদান আল্লাহ নিশ্চয়ই দিবেন। কিন্তু তাই বলে মানসিক বা শারীরিক টায়ার্ডনেসের ফলে অপরজনের উপরে বিরক্তি বা নিজেদের সংসার বা সম্পর্কের উপরে বিরক্ত যদি হয়ে পড়েন--তাহলে মনে রাখবেন আপনি শয়তানের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন। মনে রাখবেন, এই মন এবং শরীরের স্রষ্টা যিনি--তার কাছেই শক্তি চাইতে হবে। আপনার স্বামী/স্ত্রীও দুর্বল;তিনিও একজন ভুলত্রুটি মেশানো একজন মানুষ। সম্পর্ককে তাজা রাখতে তাই আপনার নিজেরও তাজা থাকা প্রয়োজন। অনেকসময় আপনার নিঃশব্দ আলিঙ্গনটুকু আপনার জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনীকে অনেকখানি আশ্বস্ত করে, শক্তিশালী করে। সম্ভব হলে এই কাজটুকু কেন করবেন না?

যখন পরিশ্রান্ত লাগবে, আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আপনার অন্তরকে, শরীরকে, মনকে উদ্দীপ্ত করে দেন। দোয়া করুন যেন আল্লাহ আপনাদের দু'জনকে দু'জনার চক্ষুশীতলকারী সঙ্গী হিসেবে কবুল করেন। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সাবধান থাকবেন। স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে শয়তান একেকজনকে হতাশ করে দেয়, যা আরো অনেক পাপকাজের সূচনা করে। আল্লাহ আমাদের পরিবারগুলোতে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিন। আল্লাহ আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কগুলোকে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও খারাপ মানুষের হিংসা থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ তো প্রেমময় ও ক্ষমাশীল।

একই প্রাণ, একই আত্মা কেবলই গল্প-উপন্যাস -মুভির বিষয়

​​যখন আপনার স্বামী/স্ত্রীর সাথে আপনার মতপার্থক্য হবে, বুঝবেন এটাই স্বাভাবিক। দু'জন মানুষের মাঝে খুব বেশি মিল থাকা সম্ভব হয় না কখনো। একই প্রাণ, একই আত্মা -- এইসব কেবলই গল্প-উপন্যাস -মুভির বিষয়। বাস্তব জীবনে আপনাদের অতীত আলাদা, আপনাদের চিন্তার ধরণ আলাদা, আপনাদের শৈশব-কৈশোর আলাদা। এই ভিন্নতার পরেও দু'জনে দু'জনার খুব কাছের মানুষ কেননা আপনারা দু'জনে একসাথে হয়েছিলেন দুইজনের সত্ত্বা হারিয়ে এক হয়ে মিশে যেতে নয়, বরং দু'জন পাশাপাশি একটি অভিন্ন লক্ষ্যে যাত্রা করতে। আর জান্নাতে যাওয়ার সেই প্রচেষ্টা মৃত্যু পর্যন্ত আপনি ছেড়ে দিবেন না নিজের স্বার্থেই, তাইনা? স্বামী-স্ত্রী দু'জনের কিছু ভিন্নতা কিন্তু প্রত্যেকের জীবনে ভারসাম্য তৈরি করে দেয়। মনোমালিন্য হলে সেই দুরত্বটুকুকে জোড়া লাগাতে উদ্যোগ নিয়ে ফেলুন। নিজে থেকে সমস্যা সমাধান করতে প্রথমে এগিয়ে আসলে যদি তখন মনের মাঝে জেগে ওঠা পরাজিত হবার টনটনে অনুভূতি, অহং বা দেমাগকে এই সুন্দরতম সম্পর্কতে হিসেবে নিয়ে আসেন তবে আপনি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই সম্পর্কটার গোটাটাই আপনার --জীবনসঙ্গীর ভালো থাকা আসলে আপনারই ভালো থাকা। তাই দু'জনের ভিন্নতাটুকুকে গ্রহণ করে নিন এবং অপরজনকে স্বস্তি দিতে একটু যদি স্যাক্রিফাইস করতেই হয়, তবে করে ফেলুন। দেখবেন এটুকুর কারণে আপনি যেই আনন্দ আর শান্তি উপভোগ করবেন তা আপনার ওটুকু কষ্টকে ভুলিয়ে আপনাকে অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি দিবে। সুন্দর দাম্পত্য জীবনটা রেডিমেড পাওয়া যায় না, তাকে তিলে তিলে গড়ে নিতে হয়। গড়ে ওঠা সেই শান্তির বাড়ির কারিগর কিন্তু মূলত আপনিই! জ্বি, আপনি এবং আপনারা দু'জন...

রাগারাগি করে আমরা আমাদের পরিবারের শান্তিকে ধ্বংস করি

​​
​​​​​​জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনীর সাথে রাগারাগি করে আমরা আমাদের শান্তিকে ধ্বংস করি। রাগ হলে শয়তান আপনার উপরে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ছোট্ট একটা ব্যাপারকে আপনার কাছে অনেক বড় মনে হবে,  আপনি এমন সব কথা বলে বসবেন যা হয়ত ভুল করে ফেলা আপনার স্বামী বা স্ত্রীর অন্তরকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেবে। আপনার রাগের মাথায় বলে ফেলা কথা আপনার মাঝে দুরত্ব তৈরি করে দিবে, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দিবে। এমন সব স্মৃতির জন্ম দিবে দু'জনের মনের মাঝে যা পরবর্তীতে বুকে কাঁটা হয়ে বিঁধবে। তাই রাগ করবেন না। সমস্যা তৈরি হলে আলোচনা করুন।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারলে শয়তান প্রচন্ড আনন্দিত হয়, সে এমন প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকে যেন ছোট্ট ভুলকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রী রাগারাগি করে পারস্পরিক অশান্তি তৈরি করে এবং ফলশ্রুতিতে যেন বড় বড় অন্যায় এবং পাপের জন্ম হবার সুযোগ তৈরি হয়। আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করুন যেন আল্লাহ আপনাদের সম্পর্ককে যাবতীয় অকল্যাণের হাত থেকে রক্ষা করেন। রাগ হলে কথা না বলে সংযত হোন। আপনার পছন্দ/অপছন্দ এবং ইগোর চেয়ে আপনাদের সম্পর্কটিকে মূল্য দিন। চিৎকার করবেন না, বাজে শব্দ ব্যবহার করবেন না। মনে রাখবেন, রাগান্বিত হয়ে আপনি যা করবেন সবই অকল্যাণকর হবে। আল্লাহ আমাদের রাগ সংযত করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদের পরিবারগুলোকে অন্যায় ও অকল্যাণের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখুন।

একটা সুখী দাম্পত্য জীবন খুব সহজ কাজ নয়

একটা সুখী দাম্পত্য জীবন পাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। দু'টি ভিন্ন মানুষ, ভিন্ন প্রাণ, ভিন্ন পরিবার, ভিন্ন মন হলেও কিছু মিল নিয়ে সংসার  এগিয়ে চলে। সংসারে দু'জন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তৃতীয়জন হলো শয়তান যে সবসময় সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরাতে চায়, রাগিয়ে দিতে চায়, স্বামী বা স্ত্রীকে পাপকাজে নিমজ্জিত করে তাদের পবিত্র সম্পর্কে অপবিত্রতা প্রবেশ করাতে চায়। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে সাহায্য চাওয়া খুব প্রয়োজন। প্রতিদিন অনেকবার করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উত্তম যেন তিনি এমন স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান দান করেন যাদের দেখে আপনার হৃদয় শীতল হয়, চোখ জুড়িয়ে যায়, অন্তরে শান্তি অনুভব করবেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত নিজের ঈমানের বৃদ্ধির জন্য, সৎকাজের জন্য, হালাল রিযিকের জন্য। যেকোন কিছুর মাঝে সেরা জিনিসগুলো তো মূল্যবান ও কষ্টার্জিতই হয়, তাইনা?

সংসার জীবনে ভালোবাসাকে প্রাণবন্ত করে রাখতে হয়

সংসার জীবনে ভালোবাসাকে প্রাণবন্ত করে রাখতে হয়, ঠিক যেমন সুঘ্রাণময় ফুলকে আপনি পানি দিয়ে আরো বেশি জীবন্ত করে রাখেন। দু'জন দু'জনকে জেনে-বুঝে তবেই তো সঙ্গী করেছিলেন। সেই মানুষটি আপনার জন্য তার সবটুকু নিয়ে সংসার বেঁধেছেন। ঘরে বাইরে যত রকম অভিজ্ঞতা হোক, হৃদয়ের প্রিয়তম কুঠুরিটা আপনার জন্যই তিনি বরাদ্দ রেখেছেন। সন্দেহ আর অভিমানটুকু তুলে রেখে বাসুন না হয় আরেকটু ভালো। আপনার ভালোবাসা আপনাকে ছোট করে দিবে না। আপনার ভালোবাসা তার কাছে আপনার ওজন কমিয়ে দিবে না। ভুলত্রুটিটুকু এড়িয়ে যদি আপনি তাকে আরো ভালোবাসেন, সেটা আপনাকে তার কাছে সম্মানিত এবং আরো প্রিয় করবে। আপনি ভালোবাসা পাওয়ার একটি পথ তৈরি করতে পারলেন...

কী পাওয়া উচিত ছিলো সেই হিসেবের চেয়ে কী কী দেওয়া উচিত সেই হিসেব করলে সংসার জীবনটা অনেক বেশি মধুর হয়। আল্লাহকে খুশি করতে কষ্ট করলে তিনিই ইনশা আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। হৃদয়গুলোর মালিক তো কেবলই আল্লাহ, তাইনা?